
নিজের ছেলেকে খুন করে মাটিতে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগে অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন বাবা আরজেদ শেখ। দীর্ঘ ১৩ বছর পর পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছিল চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের খবর চাউর হতেই ভগবানগোলার কুঠিরামপুর এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। ভগবানগোলার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক উত্তম গড়াই বলেন, “উদ্ধার হওয়া হাড়গোড়ের ফরেনসিক পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায় যে এটি আশরাফুলের দেহের হাড়গোড়। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে প্রমাণ মেলে, খুনের সঙ্গে আরজেদ শেখ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাগরা বিবি জড়িত। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত ব্যক্তি বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। অবশেষে, বুধবার এলাকায় ফিরতেই বৃহস্পতিবার বিকেলে জিয়াগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এখন সাগিরা বিবির খোঁজ চলছে।”
প্রসঙ্গত প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয়বার বিয়ে করে রামপুর এলাকায় বসবাস শুরু করেন আরজেদ শেখ। এই ঘটনার পর তার প্রথম পক্ষের মেয়ে আরজিনা ও ছোট ছেলে আশরাফুল হক দিদার বাড়িতে থাকতে শুরু করে। ২০১৩ সালের আগস্টে এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আশরাফুলকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়িতে যায় আরজিনা। তখন আরজেদ শেখ আশরাফুলকে কয়েকদিন নিজের কাছে রেখে দিয়েছিল। কিন্তু এরপর থেকে সে নিখোঁজ হয়ে যায়। দিদি আরজিনা থানায় নিখোঁজের অভিযোগ জানালেও আশরাফুলের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। কয়েক বছর পর, ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই বাড়ির ভিটেতে মাটি কাটতে গিয়ে আরজিনার কোদালের কোপে উঠে আসে স্কুল পোশাক ও হাড়গোড়। কোমরে বাঁধা নাইলনের জালি দেখে তিনি নিশ্চিত হন, সেটি তার ছোট ভাই আশরাফুলের দেহাবশেষ (আপনজন আর্কাইভ ১৫ই জুলাই ২০২৪)।
সেদিনই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন দিদি আরজিনা খাতুন। দিদা জাসু বেওয়ার দাবি, “আমার নাতিকে তার বাবা আর সৎমা মিলে খুন করেছে। আমরা ন্যায়বিচার চাই।” অবশেষে পুলিশের তদন্তে সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। বাবা গ্রেপ্তার হওয়ার খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আরজিনা। তিনি বলেন, “অবশেষে আমার ভাইয়ের হত্যাকারী ধরা পড়ল। এতদিন ধরে শুধু এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। দোষী আমার বাবা হলেও তার উপযুক্ত শাস্তি হোক।”
সব মিলিয়ে আশরাফুল হত্যায় বিচারের আশায় দিন গুনেছে ভগবানগোলার কুঠিরামপুর।